1. dainikbanglanews01@gmail.com : https://www.dainik-banglanews.online/ https://www.dainik-banglanews.online/ : https://www.dainik-banglanews.online/ https://www.dainik-banglanews.online/
  2. info@www.dainik-banglanews.online : দৈনিক বাংলা খবর :
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

খুলনায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ : জড়িত না থেকেও আসামি ছাত্র, কিশোর `সমন্বয়ক পরিচয় শুনে বেড়ে যায় নির্যাতন’

বাংলা খবর ডেক্স
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

‘গভীর রাতে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে। আমাকে ও ছোট ভাগ্নেকে ঘুম থেকে তুলেই মারপিট শুরু করে তারা। এর মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেন সদর থানার সেকেন্ড অফিসার নান্নু মন্ডল। তিনি অন্যদের বলেন, এ তো ছাত্র সমন্বয়ক। এরপর ভাগ্নেকে রেখে সবাই আমাকে পেটানো শুরু করেন। কেন মারা হচ্ছে, আমার অপরাধ কী প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি।
একপর্যায়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে প্রধান সড়কে নিয়ে যায়। সেখানে দুই জন পা পাড়িয়ে ধরে, চারজন হাত, একজন মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে বাকিরা পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।’

গত ৪ অক্টোবর রাতে তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন খুলনার আযমখান কমার্স কলেজের ছাত্র তারেক মোল্লা। শরীরের একপাশ জুড়ে দগদগে ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘ঘাটে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বাবাকে খুঁজতে এসেছিল পুলিশ। তাকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সমন্বয়ক পরিচয় শুনে বেশি মেরেছে।’

নির্যাতনের শিকার তারেক মোল্লা জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি বর্তমানে কমার্স কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি।

নগরীর ঘাট এলাকার গ্রীণল্যান্ড আবাসিকে তারেকদের বাড়ি। গত দুই দিন ঘাট শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকায় ওবায়দুল নামের এক শ্রমিকের মটর সাইকেল চেক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ায় শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে পুলিশ-শ্রমিক উভয় আহত হন।

গভীর রাতে ২১নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তাকে না পেয়ে ছেলে তারেক মোল্লা, কিশোর নাতি হৃদয় হাওলাদার এবং ওবায়দুলের ভাই শহিদুল হাওলাদারকে আটক করে। এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক এবাদ আলী বাদি হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তারেককে ১নং, নাতি হৃদয়কে ৩নং এবং তালেব মোল্লাকে ৫নং আসামি করা হয়েছে। স্বাক্ষী ১৩ জনই পুলিশ। দুই দিন প্রিজন সেলে থাকার পর গত ৬ এপ্রিল এই মামলায় জামিন পেয়েছেন তারেক ও হৃদয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে খুলনা সদর থানার মামুর মাজার এলাকার ৬নং স্কীট ঘাট হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে মটর সাইকেল চেক করার সময় অজ্ঞাতনামা ৩ আসামি মটর সাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। পরে তারা অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে চায়। তাদেরকে বাঁধা প্রদান করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বেআইনী জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদান করে।’
বৃহস্পতিবার ঘাট এলাকায় গেলে শ্রমিকরা জানান, ফুড ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ ওবায়দুলের মটর সাইকেল চেক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। পুলিশ একজন শ্রমিককে মেরে দাত ভেঙে ফেলেছে-এমন কথা শুনে অন্য শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। বেশ কিছু সময় ধাওয়া-ইট মারামারি হয়েছে। তবে তালেব মোল্লার ছেলে-নাতি কেউ ওই জায়গায় ছিল না। হয়রানির ভয়ে শ্রমিকরা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘রাতে চিল্লাপাল্লা শুনে বের হয়ে দেখি তালেব মোল্লার ছেলেরে ধরে নিয়ে মারতেছে। ওরে সবাই সমন্বয়ক হিসেবেই চেনে। পোলাপানের ভর্তি, অসুস্থ হলে রক্ত লাগলে, যে কোনো কাজে সবার উপকার করে। ওরে মারতে দেখে সবাই কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ভয়ে কেউ ছাড়াতে যায়নি।’

শ্রমিকদল নেতা তালেব মোল্লা বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ শ্রমিকরা এসে বলে আমাদেরকে পুলিশ মারধর করছে। তখন আমি গিয়ে মীমাংসা করে দিই। আমার ছেলে-নাতি তারা কেউউ ঘটনাস্থলে যায়নি। আমি নিজেও মারামারির সময় ছিলাম না।

সেই মটর সাইকেলের মালিক ওবায়দুল হাওলাদার বলেন, ওই দিন তারেক, হৃদয় কেউই মারামারিতে ছিল না। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সমস্যা হয়েছিল। পরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিনিয়র নেতারা বসে মীমাংসা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে না থেকেও তারেক কিভাবে আসামি হলো জানতে চাইলে মামলার বাদি ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এবাদ আলী বলেন, ‘নৌবাহিনী সদস্যরা ধরার পর ওই সময় সে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছে মারামারিতে ছিল। আমাদের দেশের নিয়ম তো এমনই পরে অস্বীকার করে’।

গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারেক মোল্লার পরিবার। সেখানে তারেক বলেন, ‘৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার সময় আমি কোথায় ছিলাম এটা আমার মোবাইল ট্রাকিং করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার নান্নু মন্ডল আমাকে চিনতেন। ঘরে ঢুকে তিনিই আমাকে সমন্বয়ক হিসেবে চিনিয়ে দেন। আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্য বলছিলেন, ৫ তারিখের পর দেশটাকে জাহান্নামে বানিয়ে ফেলেছিস। এখন আমরাও মারবো, আ’লীগও মারবে, বিএনপিও মারবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে সদর থানার এসি, ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের মাধ্যমে ছাত্র ও তাদের পরিবার সবচেয়ে বেশি হয়রানি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেই অফিসার নান্নু মন্ডল এখনও বহাল এবং এখনও ছাত্রদের ওপর নির্যাতনে নেতৃত্ব দিচ্ছে-এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর হতে পারে না।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিল তারেক। পরে আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং তারেক ছাত্রশিবিরের কমিটিতে চলে যায়। ওর ওপর অমানবিক নির্যাতনে জড়িত সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে এস আই নান্নু মন্ডল বলেন, অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিল যৌথ বাহিনী, মামলা করেছে ডিবি। আমি তারেককে চিনি না, মারপিটের বিষয়ে জানি না।

সচেতন নাগরিক কমিটি খুলনার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, অভ্যুত্থানের পরও পুলিশের আচরণে পরিবর্তন না হওয়া দুঃখজনক। একজনের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ। পুলিশকে এর থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© দৈনিক বাংলা খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট